মঙ্গলবার ১৯ আগস্ট ২০২৫ - ০৮:০৬
গায়বাতে কুবরার যুগে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) কেথায় অবস্থান করছেন?

গায়বতের যুগে ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আবাসস্থল নিয়ে বহু প্রশ্ন থাকলেও ইসলামী সূত্রসমূহ জানায়, তিনি কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নন; বরং দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে গমনাগমন করেন। যদিও ইমামের অবস্থান বা দৈনন্দিন জীবন গোপন থাকাও যেমন সন্দেহজনক নয়, তেমনি প্রকাশ পেলেও গায়বাতের মূল সত্যে কোনো পরিবর্তন আনে না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: গায়বাতে কুবরার যুগে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) কোথায় অবস্থান করছেন?— প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত।

আসলে এ বিষয়ে একটি মৌলিক বিষয় মনে রাখা জরুরি: ইমামের আবাসস্থল, খাদ্য, দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না থাকলেও এতে কোনো সন্দেহ বা দ্বিধার অবকাশ নেই। একইভাবে, এগুলো জানা থাকলেও গায়বাতের সত্যতা বা তার যৌক্তিকতা কোনোভাবেই প্রভাবিত হয় না। যখন আমরা বিশ্বাস করি যে ইমামের গায়েব থাকা একটি যৌক্তিক ও বোধগম্য বিষয়, তখন তাঁর অবস্থান বা অন্যান্য বিবরণ গোপন থাকাও আরও বেশি স্বাভাবিক। ফলে এসব বিষয়ে আমাদের বেখবর থাকা কোনো ঘাটতি বা সমস্যা নয়।

তবুও প্রশ্নটির সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে বলা যায় যে, সহীহ হাদিস ও নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক কাহিনি থেকে যা প্রতীয়মান হয় তা হলো— ইমাম (আ.ফা.) গায়বাতে কুবরার সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা শহরে স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন না— যে সেখান থেকে তিনি বের হবেন না কিংবা অন্য কোথাও যাবেন না।

বিভিন্ন স্থানে সফর ও উপস্থিতি
বিশ্বস্ত কিছু হাদিস ও ঘটনা থেকে জানা যায় যে, গায়বাতে কুবরার যুগে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনায় দেখা যায় যে, তিনি একাধিক শহরে উপস্থিত হয়েছেন। সেসব শহরের মধ্যে নিশ্চিতভাবে উল্লেখযোগ্য হলো—মদিনা মুনাওয়ারা, মক্কা মুকাররমা, নাজাফ, কুফা, কারবালা, কাজিমাইন, সামররা, মাশহাদ, কোম ও বাগদাদ।

এছাড়া কয়েকটি পবিত্র স্থানে তাঁর উপস্থিতির বিশেষ নিদর্শন পাওয়া যায়, যেমন—কোমের জামকারান মসজিদে, কুফার মসজিদ, মসজিদে সাহলা, নাজাফের ওয়াদী আস-সালামের ‘মাকাম সাহিবুল আমর’ এবং হিল্লার কিছু স্থান।

অনুমান করা যায় যে, তাঁর প্রধান উপস্থিতির স্থান বা অধিকাংশ সময় কাটানোর জায়গা হলো মক্কা মুকাররমা, মদিনা মুনাওয়ারা এবং ইরাকের পবিত্র আতাবাতসমূহ।

দোয়ায়ে নুদবা ও দুটি স্থানের প্রসঙ্গ
দোয়ায়ে নুদবায় “কুহে রাজাভী” ও “যি তুওয়া”-র উল্লেখ এসেছে, যেমন:

لَیْتَ شِعْری أَیْنَ اسْتَقَرَّتْ بِکَ النَّوَی، بَلْ أَیُّ أَرْضٍ تُقِلُّکَ أَوْ ثَرَی أَبِرَضْوَی أَوْ غَیْرِهَا أَمْ ذِی طُوَی

হায়, যদি জানতে পারতাম আপনি কোথায় স্থির হয়েছেন! কোন ভূমি  আশ্রয় দিয়েছে? রাজাভী’র পাহাড়ে, না অন্য কোনো স্থানে? নাকি যি তুওয়াতে?

ঐতিহাসিক গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে এই স্থানগুলো পবিত্রতার জন্য খ্যাত। সম্ভবত ইমাম মাহদী (আ.ফা.) কখনও ইবাদত ও নির্জনতার জন্য এই স্থানগুলোতে সময় অতিবাহিত করেন। তবে এটিকে স্থায়ী আবাসস্থল হিসেবে ধরা ভুল।

দোয়ায়ে নুদবার এসব বাক্য বাস্তব অনুসন্ধানের জন্য নয়; বরং ইমামের বিচ্ছেদ জনিত ব্যথা, আকাঙ্ক্ষা ও অপেক্ষার অনুভূতি প্রকাশ করে। উপরন্তু, দোয়ার কিছু অংশে ইঙ্গিত রয়েছে যে তিনি জনগণের মধ্যেই আছেন, আমাদের থেকে আলাদা নন। যেমন:

بِنَفْسِی أَنْتَ مِنْ مُغَیَّبٍ لَمْ یَخْلُ مِنَّا بِنَفْسِی أَنْتَ مِنْ نَازِحٍ لَمْ یَنْزَحْ عَنَّا

আপনার জন্য আমার প্রাণ উৎসর্গ হোক—আপনি গায়েব, কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে অনুপস্থিত নন। আপনি দূরে, কিন্তু আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন নন।

“সামেরার সারদাব’’ নিয়ে অপপ্রচার
কিছু মানুষ, বিশেষত কিছু সুন্নি আলেম দাবি করেন যে, শিয়ারা বিশ্বাস করে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) সামেরার সারদাবে লুকিয়ে আছেন।

এর জবাব হলো—এটি নিছক অপপ্রচার, মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক অভিযোগ ছাড়া কিছু নয়। এর কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল বা উৎস নেই।

সংক্ষেপে বলা যায়: ইমাম মাহদী (আ.ফা.) গায়বাতের যুগে কোনো স্থায়ী আবাসস্থলে সীমাবদ্ধ নন। বরং তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে গমনাগমন করেন এবং তাঁর প্রধান উপস্থিতি থাকে মক্কা, মদিনা ও পবিত্র আতাবাতসমূহে। দোয়া ও ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো ইমামের প্রতি উম্মতের আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসা ও প্রতীক্ষার প্রতীক, কোনো স্থায়ী আবাসস্থলের তথ্য নয়।

এই আলোচনা চলবে...

গ্রন্থসূত্র: নেগীনে অফারিনেশ গ্রন্থ থেকে সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত রূপে সংকলিত।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha